রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

নামাজে মনোযোগী হওয়ার টিপস।

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার কিছু টিপস
আপনি যেই ব্যবসা, চাকরী বা কাজই করুন না কেন, আল্লাহ একটি সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া আমদের মাঝে চালু রেখেছেন, একটি স্বর্গীয় প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তি মরুভুমিতে থাকুক, কিংবা নিউইয়র্কে থাকুক, বা কোন বনের মাঝে থাকুক, যেখানেই থাকুক না কেন সে সবসময় আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকবে। কিসের মাধ্যমে? সালাত বা নামাজের মাধ্যমে। আপনি নামাজ পড়েই এটা ভাবতে পারেন না যে আল্লাহর সাথে আপনার যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেল।
আপনার নামাজের মাঝে একটি বিশেষ গোপন উপাদান থাকতে হবে, যা আপনাকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখবে। যদি সেই জিনিস অনুপস্থিত থাকে তাহলে আপনার নামাজ হয়ে পড়বে অন্তঃসারশূন্য একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, আপনি অন্তত নামাজের জন্য হয়তো দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু সেখানে একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। এখন সেই গোপন জিনিসটি কি? আল্লাহ বলছেন قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ''মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে'', ’الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ‘ এখানে গোপন জিনিসটি হলো خَاشِعُونَ সত্যিকারের মু’মিনরাই সফল হয়েছে, যাদের সালাতে রয়েছে খুশু। বিনম্রতা, আনুগত্য, অখন্ড মনোযোগ, এই সবকিছুই হচ্ছে খুশু।
প্রকৃত অর্থে যেটা আমাদেরকে করতে বলা হয়েছে তা হল, যেই মাত্র আমি বলবো আল্লাহু আকবার, আমরা অন্য আরেকটি জগতে চলে যাব, এই দুনিয়া তখন আপনার কাছে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, আপনার সন্তানের কথা মনে থাকবে না, স্ত্রীর কথা মনে থাকবে না, আপনার কাজের কথা মনে থাকবে না, কোন কিছুরি অস্তিত্ব থাকবে না, শুধু মাত্র আপনি এবং আল্লাহ, ব্যাস। যখন আমরা নামাজে দাঁড়াবো তখন আমাদেরকে এই রকম মনোজগতে প্রবেশ করতে হবে।
তাই সাধারণভাবে বলা হয় যে নামাজের জন্য একটি নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়াতে। আর আমার ব্যক্তিগত উপদেশ হচ্ছে নামাজ শুরু করার আগে সেই জায়গায় আগে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন এবং মনের সব চিন্তাভাবনা আগে সরিয়ে ফেলুন, মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন, এবং নিজেকে শুধুমাত্র সালাতের সাথে যুক্ত করুন।
এবং যখন নামাজ পড়বেন, জানুন যে কি পড়ছেন, যদি আরবী নাও জানেন, তাহলেও কিছু শব্দ ভান্ডার গড়ুন, বিভিন্ন লেকচার শুনুন, তাফসীর পড়ুন, অন্তত যেই আয়াতগুলো আপনার মুখস্ত সেগুলোর। যাতে সেই আয়াতগুলোর সাথে আপনার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
কারণ সালাহ মানেই হচ্ছে আল্লাহ এবং আপনার মাঝের কথোপকথন। আপনার নামাজ যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি আল্লাহর সাথে কানেক্টেড আছেন, আর যদি আপনার নামাজ দূর্বল থাকে,তাহলে আল্লাহর সাথে যোগাযোগও দুর্বল এমনকি যদি আপনি মসজিদেও থাকেন। অর্থাৎ মসজিদে থেকেও আপনার আল্লাহর সাথে কোন সম্পর্কই নাও থাকতে পারে, যদি আপনি নামাজে মনোযোগ না দেন। তাই এই প্রশ্নে আমার জবাব হচ্ছে সমস্যা আপনার কাজ নয়, সমস্যা হচ্ছে আপনার মনোযোগে। আল্লাহ ভাল জানেন।
---নোমান আলী খান

বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

লোকমান হেকিমের ৫০ টি গুরুত্তপুন্ন উপদেশ।

বেশির ভাগ আলেমের মতে, হজরত লোকমান হেকিম রহ: নবী ছিলেন না। হ্যাঁ, একজন পুণ্যবান, মুত্তাকি ও ওলি ছিলেন। যাঁকে মহান আল্লাহ উচ্চস্তরের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক, দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিলেন। তিনি বুদ্ধি-বিবেক ও বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে এমন সব বিষয় উদঘাটন করেছিলেন, যা নবী-রাসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত বিধিবিধান ও দিকনির্দেশনার অনুরূপই ছিল। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত উপদেশ ও জ্ঞানগর্ব বাণীগুলো জনগণের মাঝে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং প্রজন্মান্তরে আলোচিত হয়ে আসছিল। মহান আল্লাহ সেসবের একটা অংশ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করে তাঁর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। সম্ভবত এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এমনটি আলোকপাত করা যে, শিরক ইত্যাদি পাপ ও মন্দকর্ম হওয়া প্রশ্নে যেভাবে সৃষ্টিগত স্বভাব-প্রকৃতির সাক্ষ্য ও নবী-রাসূলদের ওহির মাধ্যমে প্রমাণিত; তেমনি জগতের বিশিষ্ট ও প্রকৃত জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবীরাও তা নিজ নিজ বুদ্ধি-বিবেক ও দূরদর্শিতার দ্বারা সত্যায়ন ও প্রমাণ করে আসছেন।
হজরত লোকমান রহ: কে ছিলেন? কোথায় অবস্থানকারী ছিলেন এবং কোন্ যুগ-সময়ে অতিবাহিত হয়েছেন? তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট করা যায়নি। অনেকের মতে, হাবশি তথা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিলেন এবং হজরত দাউদ আ:-এর সমসাময়িক ছিলেন। কারো কারো মতে, তিনি পৃথিবীতে ৪৫০০ বছর বসবাস করেছিলেন। উপদেশ প্রদানে তিনি নিজ পুত্রকে সম্বোধনের মাধ্যমে একটি বিশেষ ধারা অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর উপদেশমালার সংখ্যা প্রশ্নে অনেক মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কোনো কোনো আলেম ৩০০০ বলে উল্লেখ করেছেন।‘জান্নাতুল-খুলুদ’ গ্রন্থাকার তা ৭০০০ বলেছেন। আমরা এখানে সূরা লোকমানের তাফসির ‘তাফসীরে উসমানী’, ‘ইবনে কাসীর’ ইত্যাদির অনুসরণে ‘মা‘আদিনুল-জাওয়াহির’ গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত ৫০টি নসিহতপূর্ণ বাণী পাঠকদের উদ্দেশ্যে পেশ করছি-
১. হে বৎস! আল্লাহ তায়ালার পরিচয়-জ্ঞান অর্জন করো এবং তাঁকে ভালোরকম বুঝতে সচেষ্ট হও। ২. অন্যকে যে-কথা বলবে তাতে নিজেও আমল করবে। ৩. সুযোগ বুঝে কথা বলবে এবং প্রয়োজনীয়টুকু বলার জন্যই মুখ খুলবে। ৪. প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার লোকের মর্যাদা জেনে-বুঝে সে হিসেবেই তাদের সঙ্গে আচরণ বা ব্যবহার করবে। ৫. নিজের গোপনীয়তা কারো কাছে প্রকাশ করবে না। ৬. বিপদকালীন বন্ধুদের পরীক্ষা করে নাও। ৭. লাভ ও ক্ষতি দুই অবস্থাতেই বন্ধুদের পরীক্ষা করো। ৮. প্রত্যেক ব্যক্তির হক-অধিকার জানার চেষ্টা করো। ৯. বুদ্ধিমতী নন এমন নারীদের ওপর ভরসা করবে না। ১০. নারী ও শিশুদের কাছে গোপন-রহস্য প্রকাশ করবে না; এবং কারো কিছুতে লোভ করবে না।
১১. যা জান না সে বিষয়ে কাউকে পথ দেখাতে যাবে না। ১২. স্বীয় কাজকর্ম ভেবে-চিন্তা করবে। ১৩. নিজ সন্তানদের ঘোড়দৌড় ও তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ দেবে। ১৪. রাতের বেলায় চুপে চুপে কথা বলবে, যেন তোমার কোনো শত্রু তোমার কথা শুনে, সে সূত্রে ক্ষতি করতে না পারে। ১৫. নিজ সন্তানদের ‘ইলম’ ও ‘আদব’ শিক্ষা দেবে। ১৬. প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থা বুঝে তার কাজ ও সেবা করবে। ১৭. জাতি-ধর্ম ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক বা মিলেমিশে চলবে। ১৮. নিজ বস্ত্র-পোশাক পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখবে। ১৯. গৃহে প্রবেশকালীন চোখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখবে। ২০. সাধ্যমতো অবশ্যই মেহমানদের আপ্যায়ন করাবে।
২১. দানশীলতার অভ্যাস গড়ে তোলবে। ২২. প্রত্যেক কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে। ২৩. ব্যয়ের ক্ষেত্রে আয়ের প্রতি লক্ষ রাখবে। ২৪. শিক্ষককে উত্তম পিতা বলে জ্ঞান করবে। ২৫. ‘কম আহার’, ‘কম নিদ্রা’ ও ‘কম কথা’ বলার অভ্যাস করবে। ২৬. যা নিজের জন্য পছন্দ করবে, তা অন্যের জন্যও পছন্দ করবে। ২৭. দিনের বেলায় সতর্কভাবে বাক্যালাপ করবে। ২৮. সর্বদা নিজ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ২৯. অনর্থক কথাবার্তা থেকে মুক্ত থাকবে। ৩০. মানুষের সামনে কাউকে লজ্জা দেবে না।
৩১. মানুষের সামনে হাই তুলবে না। ৩২. নিরপরাধ ও নির্দোষকে অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত করবে না। ৩৩. নিজের সম্পদ গোপন রাখবে, তা বন্ধু ও শত্রু কারো কাছে প্রকাশ করবে না। ৩৪. পিতা-মাতার অস্তিত্বকে অমূল্য সম্পদ ও গণিমত মনে করবে। ৩৫. বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সঙ্গেই হাসিমুখে অবস্থান করবে, কথা বলবে। ৩৬. নিজ খাঁটি বন্ধুদের মনেপ্রাণে বন্ধু জানবে। ৩৭. যৌবনে এমন সব কাজ করবে যা ধর্ম ও দুনিয়া উভয়ক্ষেত্রে উপকারী হয়। ৩৮. যৌবনকালকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করবে। ৩৯. যে-কথাই বলবে মেপে-জোঁকে ও প্রামাণ্যরূপে হওয়া চাই। ৪০. বুদ্ধিমান ও কল্যাণকামী লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
৪১. ভালো কাজে পরিপূর্ণ চেষ্টা চালাবে। ৪২. বুদ্ধিমান ও সতর্ক লোকজনের সঙ্গে উঠাবসা করবে। ৪৩. বোকা লোকজন থেকে দূরে থাকবে। ৪৪. সাধারণ জনগণ যেন তোমার সঙ্গে বেআদবি করার সুয়োগ না পায়। ৪৫. উপস্থিত কাজ বাকি রাখবে না। ৪৬. কোনো বিপদগ্রস্তকে নিরাশ করবে না। ৪৭. বিগত শত্রুতাকে নতুনভাবে উত্থাপন করবে না। ৪৮. সম্মানীজন বা বড়দের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে না। ৪৯. বড়দের সঙ্গে হাসি-তামাশায় জড়াবে না। ৫০. বড়দের সামনে আগে আগে চলবে না।